হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, জনাব মোহাম্মাদ মুনীর হুসাইন বলেন, ইমাম হুসাইন(আ.)’র শাহাদাতের চেহলাম বা আরবাইনের শোক ও জিয়ারত পালন জায়েজ। আর এর জায়েজ হওয়া সংক্রান্ত দলিল দু ধরণের।
প্রথমত: সর্বসাধারণ(আম)দলিল যা হচ্ছে সূরা হজের ৩৬ নং আয়াতঃ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর(দ্বীনের)নিদর্শনসমুহের(শাআয়িরুল্লাহ)সম্মান প্রদর্শন করে তাহলে তা হবে তার হৃদয়ের তাক্ওয়ার নির্যাস। যেখানে সাফা-মারওয়া পাহাড় এবং কুরবানীর উটকে আল্লাহ পাকের দ্বীনের নিদর্শনাদির(শাআয়িরুল্লাহ)অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সেখানে নিঃসন্দেহে মহান নবী,ওয়ালী,নেক-সালেহ,সিদ্দীক ও শহীদগণ যে হবেন আল্লাহ পাকের দ্বীনের সর্বশ্রষ্ঠ নিদর্শন তা বলার আর অপেক্ষা ব়াখে না।
তাই এসব পূণ্যবানদের সম্মান বা তাযীম প্রদর্শন হবে নিঃসন্দেহে অন্তঃকরণসমুহের তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ। তাঁদের প্রতি অসম্মান ও বেআদবি করলে অন্ততঃপক্ষে তাদের ব্যাপারে নির্বিকার,নিস্পৃহ,নির্লিপ্ত ও উদাসীন থাকলে মনের যে তাক্ওয়া অর্জিত ও বিকশিত হবে না।
বরং আল্লাহ পাকের দ্বীন ও হযরত সালেহ(আ.)এর মুজেযা ও নুবুওয়াতের সত্যতার প্রমাণ ও নিদর্শন উষ্ট্রীর অসম্মান ও তা হত্যা করার কারণে সালেহ(আ.)র কওম যে আল্লাহর আজাবে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেরকম বালা-মুসিবতে পড়বে ও অভিশপ্ত হবে সে বিষয়টি এ আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের দ্বীনের নিদর্শনস্বরূপ মহান নবী ও ওয়ালীদের যারা অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করবে তারা নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর গজব ও লানতের পাত্র হবে এবং আল্লাহ পাক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।
যে ইমাম হুসাইন(আ.)বেহেশতের যুবকদের নেতা এবং যাঁর ব্যাপারে মহানবী(সা.)বলেছেন- ‘হুসাইন(আ.)আমা হতে এবং আমি হুসাইন হতে’। সেই হুসাইন(আ.)আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ট নিদর্শনাদির অন্তর্ভূক্ত যার সম্মান ও তাযীম হবে অন্তরের তাক্ওয়া বিকশিত হওয়ার কারণ।
তাঁর প্রতি সম্মান ও তাযীমের স্বরূপ হচ্ছে তাঁর সুখ ও আনন্দে সুখী হওয়া ও আনন্দ প্রকাশ করা এবং তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে মজলুমাবস্থায় কারবালায় শহীদ করে তাঁর পরিবারবর্গকে বন্দী করার কারণে তাঁর জন্য শোকপ্রকাশ ও আযাদারী করা।
মহান আল্লাহর ওয়ালীর প্রতি তাযীম ও সম্মানের বাস্তব নমুনা হচ্ছে উক্ত ওয়ালীর সুখে সুখী হওয়া এবং তাঁর দুঃখে দুঃখী হওয়া। আর ইমাম হুসাইনের শাহাদত দিবসে(১০ মুহররম) এবং আরবাইন (চেহলাম)উপলক্ষে তাঁরই জিয়ারত ও শোকানুষ্ঠান পালন নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর নিদর্শনাদির সম্মান ও তাযীমের বাস্তব নমুনাস্বরূপ।
শুধু তাই না বছরের যে কোন দিন ও সময়ে বেহেশতের যুবকদের নেতার জন্য শোকপ্রকাশ ও আজাদারি করা যে কাম্য ও মুস্তাহাব তা উক্ত আয়াতের সর্বজনীনতা(উমূম) ও নিঃশর্ততা(ইতলাক) থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত: আইয়ামুল্লাহ’র কথা স্মরণ করার আয়াত হচ্ছে সূরা ইব্রাহীম-১৪। আয়াতটিতে বলা হয়েছে-মূসাকে আমি আমার নিদর্শনসহ প্ররণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলোতে আনা এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে উপদেশ দাও।এতে নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। আর নিঃসন্দেহে আশুরা ২০সফর বা আরবাইনের দিবস আইয়ামুল্লাহর বা আল্লাহর দিনগুলোর অন্তর্গত কারণ আইয়ামুল্লাহ এ আয়াতে আম(সর্বজনীন)এবং তা গুটিকতক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয় নি।
তৃতীয়ত: বিশেষ দলিল- (ক) ইমাম জয়নুল আবেদীন এবং আহলে বাইত(আ.)’র আরবাইনের দিনে কারবালা আগমন ও ইমাম হুসাইন(আ’)’র জিয়ারত ও তাঁর জন্য শোকপালন এবং মহানবী(সা.)র সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল-আনসারীর ২০সফর ৬১হি. সালে কারবালা আগমন ও ইমাম হুসাইন(আ.)’র কবর জিয়ারত সংক্রান্ত বর্ণনা ও রেওয়ায়তসমুহ।
(খ) ২০ সফর আরবাইনের জিয়ারত সংক্রান্ত আহলে বাইতের ইমামদের(আ)থেকে বর্ণিত রেওয়ায়তসমুহ যেমন-আহলে বাইত(আ.)’র একাদশ ইমাম হাসান আল-আস্কারী(আ.)থেকে বর্ণিত মুমিনের আলামত হচ্ছে ৫টিঃ
১.দিবারাত্রি ৫১ রাকাত নামায ( ১৭ রাকাত ফরয,২৩রাকাত নফল ও মুস্তাহাব এবং ১১রাকাত তাহাজ্জুদ বা রাতের নামায)আদায় করা,
২. ২০সফর ইমাম হুসাইন(আ.)’র আরবাইনের চেহলাম জিয়ারত,
৩.ডান হাতের আংগুলে আংটি পড়া,
৪.মাটির উপর সিজদায় কপাল রাখা এবং
৫. নামাজে হামদ ও সূরা পড়ার আগে জোরে জোরে অর্থাৎ উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম বলা।
গ.তাহযীবুত তাহযীব এবং মিসবাহুল মুতাহাজ্জিদ গ্রন্থে শেখ তূসী ইমাম জাফর সাদিক(আ.)থেকে ২০সফর ইমাম হুসাইন(আ.)’র আরবাইনের যিয়ারত পদ্ধতি সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ইমাম হুসাইন(আ.)র আরবাইনের(চেহলাম)জিয়ারতের বৈধতা।